নগদ কেলেঙ্কারি: অদৃশ্য কোম্পানিতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ, বিদেশে পাচার

লেখক: জুলকারনাইন সায়ের ও শরিফ রুবেল
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

দেশের অন্যতম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নগদ-এর নামে ভয়াবহ আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক তদন্তে। কাগজে-কলমে বিদ্যমান, বাস্তবে অদৃশ্য কয়েকটি ছায়া-প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেই অর্থ পাচার করা হয়েছে বিদেশে। আর এর পেছনে রয়েছে  প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।

তদন্তে উঠে এসেছে, একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে চেয়ারম্যান চেনেন না এমডিকে, এমডি জানেন না কোম্পানির প্রকৃত ব্যবসা—সেই রকম অজানা, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছে নগদ। কোম্পানির ঠিকানা বনানীর একটি বহুতল ভবনে থাকলেও বাস্তবে সেখানে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই।

অবাক করা বিষয় হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে নগদের হিসাব থেকে ২,৩৫৬ কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

নগদের শেয়ার মালিকানায়ও রয়েছে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম। নামমাত্র অফিস, নামেই কোম্পানি, অথচ শেয়ারের কোটি কোটি টাকার লেনদেন!

  • ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেড: যার ঠিকানাও মিথ্যা, চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাহিম রাজ্জাক।
  • তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিটেড: যার অফিস প্রায় পরিত্যক্ত, অথচ একসময় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের আনাগোনা ছিল বলে জানালেন ভবনের দারোয়ান।
  • ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেড: যেখানে এমডি ও চেয়ারম্যান কেউ জানেন না প্রতিষ্ঠানের কাজ কী।

আর এসব প্রতিষ্ঠানের নামেই দেশের আমজনতার ঘামে রোজগার করা টাকা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আড়ালে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।

তদন্তে আরও দেখা গেছে, এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সরকারদলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক উপ প্রেস সচিব পর্যন্ত। এখনো অনেকে বহাল তবিয়তে আছেন, কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনিয়ম শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এমন দুর্বলতা জনগণের আস্থা নষ্ট করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত নতুন প্রশাসন এরইমধ্যে তদন্ত করে এসব তথ্য বের করেছে। দেশবাসীর প্রশ্ন, এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিচার আদৌ হবে কি না?


 

  • নগদ প্রতারক